মাত্র ১৩-১৪০০০ প্রবাসী বাংলাদেশী বাঙালীর দেশ জাপান | এখানকার বাঙালী সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল শুধুমাত্র রাজধানী টোকিওকে ঘিরে | কিন্তু স্থায়ী ভাবে বসবাসরত নতুন ও শিক্ষিত জেনারেশন ছড়িয়ে আছে জাপানের ৪৭ টি প্রিফেকচারে |
তারা চায় জাপানীজ স্কুল-কলেজে পড়ুয়ারত তাদের সন্তানদেরকে তাদের ধর্ম-কৃষ্টি-কালচার ও ভাষার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে | দুর পরবাসে থেকেও নব প্রজন্মকে শিকড়ের সাথে নিবিড় সম্পর্ক
তৈরী করে দিতে চায় |
সেই লক্ষ্যে গত ২২ শে ডিসেম্বর তোচিগি প্রিফেকচারের আশিকাগা নামক স্থানে গুন্মা , তোচিগি ও সাইতামা অঞ্চলের কিছু অদম্য প্রতিভাবান ও সংস্কৃতমনা ভাই বোনদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ২য় বিজয় উৎসব ২০১৯| উল্লেখ্য, আমরা যারা প্রবাসে থাকি যেকোন আয়োজন করে থাকি নির্দিষ্ট দিবসের পরবর্তী রবিবার |
বিজয়ের ৪৮ বছর পূর্তিতে প্রবাসে থেকে পরিবার সহ বিজয় দিবস উৎযাপন করাটা ছিল ভীষণ উপভোগ্য |
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের প্রতিটি ইভেন্ট ছিল চিত্তাকর্ষক ও শিক্ষণীয় |
জনাব মোঃ জাকির হোসেন এর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে সর্বপ্রথম কোরআন তেলোয়াত করে ছোট বন্ধু নাফি | আয়োজকদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জনাব সাইফুল ইসলাম ও সাবরিনা জাহান | তৎপরবর্তী বিশেষ অতিথির মূল্যবান বক্তব্য রাখেন জনাব দিদার কচি, টোকিও বৈশাখী মেলার অন্যতম আয়োজক এবং সংগঠক জনাব মোঃ জসিম ও শ্রদ্ধাভাজন লেখক ও সাংবাদিক জনাব প্রবীর বিকাশ সরকার |
বক্তব্যপালা শেষ হবার পর প্রদর্শিত হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিশেষ ডক্যুমেন্টারি |
তারপর, বিজয়ের গান “সব কটা জানালা খুলে দাওনা” নিয়ে মঞ্চে আসেন সুরেলা কণ্ঠশিল্পী সাবরিনা জাহান|
পুরুষদের দেশাত্মবোধক দলীয় সংগীত পরিবেশনায় থাকে ” তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর ” এবং নারীদের দেশাত্মবোধক দলীয় সংগীত পরিবেশনায় থাকে ” সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি ” গান দুটি |
এবারের বিজয় উৎসবে দ্বিতীয়বারের মত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রদাণ করা হয় ২ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে | গুম্মা তোচিগি ও সাইতামা প্রবাসী বাংলাদেশী দের পক্ষ থেকে জনাব প্রবীর বিকাশ সরকার ” মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারক ” তুলে দেন দুই গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান জনাব সাজ্জাদ হোসেন ও আইলা কবির কে | পর্বটি পরিচালনায় ছিলেন আয়েশা সিদ্দিকা মিতু |
মধ্যাহ্ন ভোজন ও নামাজের বিরতি শেষে শিশু কিশোরদের বয়সভিত্তিক চিত্রাঙ্কণ, বাংলা বর্ণলিখণ এবং সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় জাপানীজ ভাষায় অভ্যস্ত শিশুরা বাংলা বর্ণমালা, বাংলায় অভিবাদন ও বাংলা কবিতা/ ছড়া/ গান/ সূরা এর পরিবেষণ এ ফুটে উঠেছে দেশাত্মবোধ |
বরাবরের মত এ পর্ব পরিচালনা করেন রওশন আফরোজ রুম্পা |
সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতেই থাকে সালাহউদ্দিন জাহিদ রচিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিশেষ নাটিকা ” শেষ দৃশ্য নেই ” | নিষ্পেষিত অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধা ও কালের বিবর্তনে রাজাকারের মুক্তিযোদ্ধায় রূপান্তরিত হওয়ার পটভূমিতে রচিত এই নাটিকাটিতে অনবদ্য অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন লুৎফর রহমান, ফাতেমা লুৎফর, মনসুর আহমেদ মিলন ও মোঃ শাহাদাত |
আবৃত্তি সন্ধ্যায় চমৎকার আবৃত্তি পরিবেষণ করেন জাকির হোসেন, আয়েশা সিদ্দিকা মিতু, শতাব্দী মেহজাবিন ইরা, জান্নাতুল সরকার শম্পা ও সাবরিনা জাহান |
কবিতা আবৃত্তি শেষে থাকে হাফিজ কবির খান নাঈম ও মালিহা পারভিন জয়ীর পরিচালনায় সব সময়ের মত মজার এবং শিক্ষণীয় প্রশ্নোত্তরে কুইজ পর্ব | এ পর্বের শুরুতে ফাতেমা লুৎফর পরিচালিত ” বুদ্ধিমত্তা মূল্যায়ণ ” পর্বে এযাবৎকালের কুইজে সর্বাধিক ফাইনাল রাউন্ডে অংশগ্রহণকারী ৩ জন মৌরি বড়ূয়া, আয়েশা সিদ্দিকা মিতু ও রওশন আফরোজ রুম্পা কে পুরস্কৃত করা হয় |
এবারের বিশেষ কুইজে ৪ টি রাউন্ড অতিক্রম করে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে সাজিদ রহমান, নোমান সাইদ রাজু ও সাইফুল ইসলাম |
উল্লেখ্য অনুষ্ঠানটিতে অতিথিদের জন্য চা কফির একটিমাত্র স্টল থাকে মোঃ শাহাদাত দম্পতির পক্ষ থেকে |
সবশেষে সংগীত পরিবেশনায় বড়দের সাথে থাকে ছোটবন্ধু জেসিন এর জাপানিজ গান এর পাশাপাশি আরোহার দুর্দান্ত পরিবেশনা সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী |
ভাবীদের তৈরিকৃত মজাদার সান্ধ্যকালীন নাস্তা পরিবেষণ শেষে সন্ধ্যা ৭ টায় সকল সম্মানিত অতিথিবৃন্দকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ঘোষণা করা হয় অত্র অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে আয়োজিত ২য় বিজয় উৎসব ২০১৯ |
পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন লেখক নিজে |
লেখকঃ হাফিজ কবির খান নাঈম
Post Views:
655