ভালবাসা কবিতারই অন্য নাম।
– নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
ভাষা অর্থ দিয়ে গড়া। মানুষের ব্যবহারে অর্থের নানা রকমফের হয়ে যায়। … কল্পনা উদ্দীপিত হলে এই অর্থ কবিতা হয়ে ওঠে।
– সত্যেন্দ্রনাথ রায়
প্রত্যেক সৎ কবিই তার নিজের কাব্যের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সমালোচক।
– জীবনানন্দ দাশ
সব ধরনের পাঠকের কাছে কবিতার প্রকাশিত রূপ,পাঠ্য বা বোধ হয়তো বা দৃশ্য অনেক সময় পৌঁছায় না। আমি মনে করি প্রত্যেক সংবেদনশীল মানুষের মনেই বেশুমার কবিতার মণিমুক্তো আছে। কেউ তা চর্চায়, চর্যায় প্রকাশ করেন। কেউ লালন করেন আমার মত মনের মণিকোঠায়। তাই হয়ত জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, “সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি”। কিন্তু প্রতিদিনের জীবনযাপনে মানুষের মনের মধ্যে যে এক অনুসন্ধিতসু কবি থাকে, সেও তো দুষ্প্রাপ্য নয়। কবিতা আমাদের অনুভব, অভিজ্ঞতা ও জীবনযাপন থেকে উৎসারিত বলেই, কবিতার ওপরে আমাদের অধিকার সর্বাধিক। জীবিকার নানা ক্ষেত্রে সফলতম মানুষের কবিতার প্রতি অনাগ্রহ কাজ করে। তবে গোলাম মাসুম জিকো একজন ব্যতিক্রম মানুষ। সফল মানুষ হিসেবে অনাগ্রহের পরিবর্তে অতিআগ্রহে মাঝে মাঝে আমি সন্দেহ প্রকাশ করেছি। একদিন জানতে পারি তাঁর কবিতার বই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। একজন কাব্যপ্রেমী হিসেবে তাঁকে বললাম বইটির কিছু অংশ পড়ার ব্যবস্থা করতে। সে আমাকে প্রকাশিতব্য বইটির একটি কপি পাঠালো। বইটির নাম ‘অচিন নকশাল’। তাঁর কবিতার পটভূমিতে রয়েছে মানুষের প্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় যেসকল মানুষের অবদান কাব্য-কথন। প্রীতিলতা, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লীলা মজুমদার, চারু মজুমদার, রতন সেন, এছাড়াও রয়েছে তাঁর কবি হয়ে ওঠার কাব্যিক বয়ান।
“কারাগারের শুকনো রুটি আর ময়লা জলে
জীবন যখন দুর্ভিক্ষে মরে
ভেবেছো কি তুমি ভাতে ঘি মেখে
সে কি বিষম জ্বালা বুকে আর পেটে”
এভাবেই স্ত্রী লীলা মজুমদারের প্রতি প্রশ্ন করেছেন চারু মজুমদার, কল্পনার কবিতাতে লিখেছেন গোলাম মাসুম জিকো।
অথবা কমরেড রতন সেনকে নিয়ে লিখছেন ক্ষোভে;
“২২ বছর জেলখানার জীবন দিয়েছে অনেক,
নিয়েছিলো কি বা কখন?
বাংলা তোমার গণতন্ত্রের মুখোশে আজও
ভেগেছে কি ইংরেজ, রেখে গিয়েছিলো যতো?
কিংবা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী স্মরণে লিখেছেন
“মিলিটারির প্রেম
চুমু দিলেও ব্যাথা লাগে।
নিবিষ্ট আদরও যেন, বেয়নেটের খোঁচা।”
সংক্ষেপে বলব, বর্তমানে বাংলা কবিতায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে দুটি দিক। একদিকে ‘আশা’ ও অন্যদিকে ‘আশা-ভঙ্গের তীব্র যন্ত্রণা’। এরকম কিছু কবিতার মিশেল ‘অচিন নকশাল’। সব বই তো মানুষের মনে দাগ কেটে যায় না, তবু কবিতা হতাশা অতিক্রম করে আমাদের এক গভীর উপলব্ধি দিতে পারে। কবিতাপ্রেমী অনেকেরই বইটি ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস।