বৈশ্বিক গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে চার ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পেছনে অবস্থানও করছে।
প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের করা এই জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স-২০১৯’ প্রকাশ করে সংস্থাটি।
২০১৮ সালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে চালানো জরিপের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫০তম। গতবার যা ছিল ১৪৬তম। পয়েন্টের দিক থেকেও অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নেতিবাচক ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ৫০ দশমিক ৭৪ স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ। এর আগের বছর স্কোর ছিল ৪৮ দশমিক ৬২।
জরিপের বিশ্লেষণে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নীতির প্রথম সারির ভুক্তভোগী সাংবাদিকরাও। বিশেষত ২০১৮ সালের শেষের দিকে শেখ হাসিনার পুনর্নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এর মাঝে মাঠ পর্যায়ে সাংবাদিকদের ওপর রাজনৈতিক কর্মীদের হামলা, সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট ব্লক ও নির্বিচারে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের ঘটনা রয়েছে।
বিশ্লেষণে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফটোসাংবাদিক শহীদুল আলমকে ভিত্তিহীন অভিযোগে ১০০ দিনেরও বেশি কারান্তরীণ রাখার বিষয়টিই দেখিয়ে দেয় সরকার বিরোধী মতকে দমন করতে কীভাবে বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করছে। এই ধারা বজায় রাখতে সর্বশেষ অস্ত্র হিসেবে ২০১৮ সালের অক্টোবরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করে সরকার। এই আইনে ‘নেতিবাচক প্রচারণার’ দায়ে ১৪ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া সেক্যুলার সাংবাদিক ও ব্লগারদের প্রতি উগ্র ইসলামপন্থীদের হুমকির বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।
জরিপে বৈশ্বিকভাবে সাংবাদিকতায় ভয়ের পরিবেশ বাড়ছে বলেও উল্লেখ করেছে সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ করা সংস্থাটি। বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যমকে দমন ও সেলফ সেন্সরশিপের ঘটনা বাড়ছে।
সূচকে দক্ষিণ এশিয়া ও এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে ভুটান ৮০, মালদ্বীপ ৯৮, নেপাল ১০৬, আফগানিস্তান ১২১, শ্রীলঙ্কা ১২৬, থাইল্যান্ড ১৩৬, মিয়ানমার ১৩৮, ভারত ১৪০ ও পাকিস্তান ১৪২ নম্বরে অবস্থান করছে। যথাক্রমে উপরের দিকে রয়েছে নরওয়ে (প্রথম), ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্ক। এছাড়া যুক্তরাজ্য ৩৩তম, যুক্তরাষ্ট্র ৪৮, জাপান ৬৭, রাশিয়া ১৪৯, ইরান ১৭০, সৌদি আরব ১৭২তম অবস্থানে রয়েছে। তালিকার সবশেষে অবস্থান করছে তুর্কমেনিস্তান (১৮০), উত্তর কোরিয়া (১৭৯), ইরিত্রিয়া (১৭৮), চীন (১৭৭) ও ভিয়েতনাম (১৭৬)।