ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আজই আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে আসছে যুক্তরাজ্য যা ব্রেক্সিট হিসেবে পরিচিত। ঘোষণা অনুযায়ী আজ ৩১ জানুয়ারি রাত ১১টায় ব্রেক্সিট কার্যকর হবে।
আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রেক্সিট কার্যকর হলেও আগামী ১১ মাস অন্তর্বর্তীকালীন সময় বা ট্রানজিশনাল পিরিয়ড হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিবিসি জানায়, এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্য ইইউ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং ইইউকে অর্থ প্রদান করবে।
যেসব পরিবর্তন আসবে
১. ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যপদ হারাবেন যুক্তরাজ্যের এমপিরা
নাইজেল ফারাজ এবং অ্যান উইড্ডেকমবের মতো পরিচিত মুখগুলোসহ যুক্তরাজ্য থেকে ৭৩ জন সদস্য ছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে। ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার ফলে তারা তাদের সদস্যপদ হারাবেন।
২. ইইউ সামিটে আর নয়
ভবিষ্যতে যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিল সামিটে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অংশ নিতে চান তাহলে তার জন্য দরকার হবে বিশেষ আমন্ত্রণ।
ব্রিটিশ মন্ত্রীরাও এখন থেকে আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়মিত বৈঠকগুলোতে অংশ নিতে পারবেন না।
৩. বাণিজ্য
যুক্তরাজ্য তাদের পণ্য ও সেবা বিক্রি বা এসব কেনার জন্য নতুন নিয়ম ঠিক করতে বিশ্বের যে কোনো দেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য থাকার সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য আলোচনা করতে পারতো না যুক্তরাজ্য।
ব্রেক্সিট সমর্থকরা বলছেন, নিজের বাণিজ্য নীতি ঠিক করার স্বাধীনতা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।
৪. পাসপোর্টের রং পরিবর্তন হবে
নীল রঙের পাসপোর্ট আবার ফিরে আসবে ৩০ বছর পর। ২০১৭ সালে এ পরিবর্তনের কথা ঘোষণা দিয়ে তৎকালীন অভিবাসনমন্ত্রী ব্রান্ডন লুইস দেশটির ঐতিহ্যবাহী নীল ও সোনালি ডিজাইনের পাসপোর্ট আবার ফিরিয়ে আনার কথা বলেছিলেন।
এ পাসপোর্ট প্রথম ব্যবহার শুরু হয়েছিল ১৯২১ সালে। তবে বর্তমান যে পাসপোর্ট আছে সেটিও বৈধ থাকবে।
৫. ব্রেক্সিট কয়েন
প্রায় ৩০ লাখ বিশেষ কয়েন আসবে ৩১ জানুয়ারি এবং যেখানে লেখা থাকবে ‘পিস, প্রসপারিটি অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ উইথ অল ন্যাশনস’। তবে এ কয়েনকে ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এক পক্ষ ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে তারা এ কয়েন বর্জন করবে।
তবে সরকার একই ধরনের আরেকটি কয়েন আনার পরিকল্পনা করছে যেখানে উল্লেখ থাকবে ৩১ অক্টোবর, যে তারিখে প্রকৃতপক্ষে ব্রেক্সিট কার্যকরের কথা ছিল।
৬. বন্ধ হবে যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট ডিপার্টমেন্ট
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের যে বিভাগ আলোচনা চালিয়েছিল সেই বিভাগটি বন্ধ হয়ে যাবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’র সময়ে ওই বিভাগটি চালু করা হয়েছিল ২০১৬ সালে।
৭. জার্মানি কাউকে যুক্তরাজ্যে প্রত্যর্পণ করবে না
সন্দেহভাজন অপরাধী যদি কেউ যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে গিয়ে জার্মানিতে আশ্রয় নেয় তাহলে তাকে ফেরত পাবে না যুক্তরাজ্য। কারণ, জার্মান সংবিধান অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের নাগরিককে প্রত্যর্পণের সুযোগ নেই।
যুক্তরাজ্যের হোম অফিস বলছে, ইউরোপিয়ান অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে অন্তর্বর্তী সময় পর্যন্ত।
যেসব বিষয়ে পরিবর্তন আসবে না
১. ভ্রমণ
অন্তর্বর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা ভ্রমণের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের লাইনেই দাঁড়াতে পারবেন।
২. ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পেট পাসপোর্ট
ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পেট পাসপোর্টের বৈধতা অব্যাহত থাকবে।
৩. ইউরোপিয়ান স্বাস্থ্য বীমা কার্ড
এ কার্ড দিয়েই যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন অসুস্থতা কিংবা দুর্ঘটনায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে। এটা বহাল থাকবে।
৪. ইউরোপীয় ইউনিয়নে বসবাস ও কাজ
অন্তর্বর্তী সময়ে চলাচলের স্বাধীনতা অব্যাহত থাকবে। তাই যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা ইইউভুক্ত দেশে বসবাস ও কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। ইইউভুক্ত অন্য দেশের নাগরিকরাও যুক্তরাজ্যে একই সুবিধা পাবে।
৫. পেনশন
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্য দেশে বসবাসরত যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা রাষ্ট্রের পেনশন সুবিধা পাবেন।
৬. বাজেটে অবদান
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেটে অন্তর্বর্তী সময়েও অবদান রেখে যাবে যুক্তরাজ্য।
৭. বাণিজ্য
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইইউ’র বাণিজ্য অব্যাহত থাকবে নতুন কোনো চার্জ আরোপ ছাড়াই।