নিজের টাকায় বই কিনে পাঠকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতেন পলান সরকার। কিন্তু গ্রামের পথে ঘুরে ঘুরে আর বই বিলি করবেন না ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ পলান সরকার। বই আর পৃথিবীর মায়া ছেড়ে নীরবে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা বাউশার নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন পলান সরকার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর।
১৯২১ সালে জন্ম নেওয়া পলান সরকারের আসল নাম হারেজ উদ্দিন। তবে পলান সরকার নামেই তিনি সবার কাছে পরিচিত। অর্থাভাবে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করা পলান সরকার ছিলেন বই প্রেমিক মানুষ। প্রথম দিকে স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিলি শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধা তালিকায় ১ থেকে ১০ ক্রমিক নম্বরদের তিনি একটি করে বই উপহার দিতেন। তবে এর কিছু দিন পর থেকে সবাইকে বই দেয়া শুরু করেন।
রাজশাহী জেলার ২০টি গ্রামে গড়ে তুলেছিলেন অভিনব শিক্ষা আন্দোলন। নিজের টাকায় বই কিনে তিনি পড়তে দিতেন পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষকে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাঁধে ঝোলাভর্তি বই নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। মাইলের পর মাইল হেঁটে একেক দিন একেক গ্রামে যেতেন। বাড়ি বাড়ি কড়া নেড়ে আগের সপ্তাহের বই ফেরত নিয়ে নতুন বই পড়তে দিতেন।
বইপড়ার এমন আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তাকে ২০১১ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। বই পড়ার অভিনব আন্দোলনের জন্য একটি জাতীয় দৈনিক তার নাম দেয় ‘আলোর ফেরিওয়ালা’।
দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়। তাকে নিয়ে ‘সায়াহ্নে সূর্যোদয়’ নামে একটি নাটক তৈরি হয়েছে। ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার দৈনিকে তার উপর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।