একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী আর নেই। বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন জনপ্রিয় এ শিল্পী মারা যান। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন তার মেয়ে ফাল্গুনী নন্দী।
মৃত্যুকালে সুবীর নন্দীর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকা ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরে হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। ৩-৪ মিনিটের চেষ্টার পরে হৃদযন্ত্র সচল হলে নন্দিত এই সংগীতশিল্পীকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৩০ এপ্রিল সুবীর নন্দীকে নেয়া হয় সিঙ্গাপুরে। সেদিন থেকেই শুরু হয় তার চিকিৎসা।
রোববারও (৫ মে) তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তারপর হার্টে চারটি স্টেন্টও পরানো হয়। এরপর সোমবার (৬ মে) সকালেও আরেক দফা তার হার্ট অ্যাটাক করে এবং মাল্টিপাল অরগান অকার্যকর হয়ে যায়।
সুবীর নন্দী ১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় নন্দী পাড়া নামক মহল্লায় এক কায়স্থ সম্ভ্রান্ত সঙ্গীত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।
১৯৬৭ সালে সিলেট বেতারে প্রথম গান করেন তিনি। ১৯৭০ সালে গান করার সুযোগ পান ঢাকা রেডিওতে। রেডিওতে তার প্রথম গান ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’। এভাবে বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। পড়াশোনা শেষে দীর্ঘদিন ব্যাংকে চাকরি করলেও সুবীর নন্দী বাংলা সংগীতাঙ্গনে আসন করে নেন সুরের জাদুতেই।
দীর্ঘ ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে সুবীর নন্দী গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান।
১৯৮১ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তবে চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে।
সংগীতাঙ্গনে তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘ও আমার উড়াল পঙ্খী রে’, ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’, ‘পাখিরে তুই দূরে থাকলে’, ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভাল’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘তুমি এমনই জাল পেতেছো সংসারে’, ‘দিন যায় কথা থাকে’র মতো অসংখ্য গান।