শাহ মামুনুর রহমান তুহিন: উপ-সম্পাদকীয়//
এধরনের ঘটনা বাংলাদেশে কেন? পৃথিবীর ইতিহাসে কখনো অভাবনীয় ও বিস্ময়কর এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা জানা নেই। হাজার-হাজার ছোট শিশু, কিশোর, কিশোরী শিক্ষার্থীরা যারা একেবারেই নিষ্পাপ, নির্দলীয়। কোন নেতা নেই, নির্দেশনা নেই কিন্তু সবাই এক সুরে এক আত্মায় প্রত্যেকেই যেন এক একজন নেতা। এক একজন মুক্তিযোদ্ধা। বুঝিয়ে দিয়েছে, শিখিয়ে দিয়েছে, দেখো তোমরা পারনি, রাস্তায় কিভাবে আইন মেনে চলতে হয়। মহামান্য, মাননীয় বা বিচারপতি, মন্ত্রী, সচিব, সশস্ত্র বাহিনী, আইন শৃংখলা বাহিনী বা যেই হোক আইন সবার জন্যই সমান। রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ মানেই রাষ্ট্রের মালিক নয়। আর রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ মানেই রাষ্ট্রের প্রজা নয়। সবথেকে বড় অর্জন শুধুমাত্র যাদের আতে ঘা লেগেছে, তারা বাদে বাকী সকল শ্রেনী পেশার মানুষের সমর্থন আছে তাদের প্রতি। এ মানুষগুলি আশায় বুক বেধেছে, দেখো আমরা পারিনি, তোমরা পেরেছো। দু:খ লাগে, কষ্ট পাই, যখনি দেখি এর মধ্যে কেউ কেউ দূরবীন বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে রাজনীতি খুজে ফিরছে। কেউ কেউ তাদের প্লাকার্ডের ভাষা নিয়ে সমালোচনা করছে বা তাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। সবার কাছে একটা বিনীত প্রশ্ন:- এরা কেন রাস্তায় নেমেছিলো? তাদের সহপাঠীরা বাসের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে নিহত হয়েছে এজন্য প্রতিবাদ করতে। তারা তো কেউ তাদের আত্মীয় না। এমনকি অনেকে তাদের চিনতোও না। ভাবুনতো, যারা নিহত হয়েছে তারা আপনার বা আমার আত্মীয় তারপর ও তারা সেটাই করতো। তারা নিরাপদ সড়কের জন্য রাস্তায় দাড়ালো। দোষী ব্যাক্তিদের শাস্তিদাবী করলো। কারন প্রতিনিয়তই এধরনের ঘটনা ঘটছে। যারা গন পরিবহনে ওঠেন তারাই জানেন, কতটা অসহায় এবং জিম্মি তাদের কাছে আমরা। তারা আইন কানুনের তোয়াক্কা করেনা। কারন একই দেশে দু ধরনের আইন। একই অপরাধে সাধারণ সকল মানুষদের জন্য এক ধরনের আইন আর ড্রাইভারদের জন্য আর এক ধরনের আইন। রাস্তায় শুধু তাদের উম্মাদনায় পাল্লা দিতে গিয়ে কত দূর্ঘটনা ঘটাচ্ছে? যেখানে সেখানে গাড়ী দাড় করিয়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি করছে। আর এসব নিয়ে বলতে গেলেই তারা অপমান অপদস্থ করে। আর সে কারনেই অনেকে ভয়ে প্রতিবাদটুকু করেনা। কিন্তু দীর্ঘদিনের দানা বাধা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ওরা প্রতিবাদ করেছে, ন্যায় বিচার চেয়েছে। অতি উতসাহী কিছু সংখ্যক আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা চিরাচরিত প্রক্রিয়ায় তাদেরকে দমন করতে চেয়েছে। তাদের রক্তাক্ত করেছে, নানাভাবে তাদেরকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করেছে। অপরদিকে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রনকারী নেতা এবং প্রভাবশালী মন্ত্রী সাহেবের কাছে যখন সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছে, তখন তিনি তার স্বভাবজাত ভংগিতে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন। হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন। কারন তিনি জানেন, তার এক ইশারায় সমস্ত গন পরিবহণ বন্ধ হয়ে যাবে। মানুষ হয়ে পড়বে অসহায় ও জিম্মি। এই দাম্ভিকতা ও অহংকার আমরা সকলেই মুখ বুজে মেনে নেই। কিন্তু ওরা মেনে নেয়নি। বাকীটা দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে দেখছে গত কয়েকদিন যাবত খাটি দেশপ্রেমিকেরা ৪৭ বছরের পুরাতন রাষ্ট্রের মেরামত কাজ কিভাবে করছে। এবং এ জন্য তারা সাময়িক এ অসুবিধার জন্য দু:খ ও প্রকাশ করেছে। সকলের কাছে করজোড়ে মিনতি করে বলছি, এরা সরকার পতনের বা বিরোধী মতকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য এটা করছে না। আমার আপনার সকলের সড়কের নিরাপত্তার জন্যই এটা করছে। তাই দয়া করে এদের প্রতিপক্ষ বানাবেন না।