২০২১.১০.২৩
প্রতিবাদলিপি
প্রতিবাদলিপি
দেশ ও প্রবাসের সাংস্কৃতিক কর্মীদের বাংলাদেশে সংঘটিত ধারাবাহিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে বিবৃতি –
আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশে বিগত বছরগুলো ধরে ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, ধর্মীয় উৎসবে ন্যাক্কারজনক হামলা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপতৎপরতা, হত্যা ও ধর্ষণের মত নৃশংস ও অমানবিক কর্মকাণ্ড এবং এর রোধকল্পে রাষ্ট্রযন্ত্র, রাজনৈতিক দলসমূহ ও নাগরিক সমাজের যৌথ ব্যর্থতা।
বিশেষ করে, সম্প্রতি সনাতন ধর্মালম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব ‘শারদীয় দূর্গাপূজা’ চলাকালীন সময়ে ও পরবর্তীতে গুজব ছড়িয়ে কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মীয় উপাসনালয় থেকে শুরু করে তাদের জান-মালের উপর যে নৃশংস হামলা, লুটতরাজ ও হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে – সে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির ব্যর্থতা প্রকটভাবে প্রকাশিত হয়েছে এবং একই সাথে সামাজিকভাবে নাগরিক-প্রতিরোধের শূন্যতাও ধরা পড়েছে। এ ঘটনায় দেশে-বিদেশে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশি ভীষণ মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন।
সাম্প্রদায়িক এসব হামলা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অতীতে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর উপর পরিচালিত বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া, ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদের পরিবর্তে রাজনৈতিক দলসমূহের তথ্য-প্রমাণ বিবর্জিত পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতি, ধর্মকে উপজীব্য করে ভোটের রাজনীতি এবং দেশব্যাপী নানা অপকৌশলে মুক্ত চিন্তাধারার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে- আজ অপশক্তির এই আগ্রাসী রূপ ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। কুচক্রী, স্বার্থান্বেষী ও ক্ষমতালোভীদের ধর্মের নামে সহিংসতা চালানোর মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সাম্য, মৈত্রী এবং মানবিকতার বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা প্রতিমুহুর্তে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে- জাতি, বর্ণ,ধর্ম,গোত্র নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সম-অধিকার ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যেমন রাষ্ট্রের, তেমনি একজন নাগরিকের দায়িত্ব দেশের সংবিধান-আইন ও অন্য নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। এক্ষেত্রে কোন মাপকাঠিতেই দেশের জনগণকে সংখ্যার অনুপাতে বিভাজিত করার সুযোগ যেমন নেই; ঠিক তেমনি তাদের ধর্মীয় আচার পালন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা প্রদান করার অধিকার কারো নেই।
এমতাবস্থায় আমরা এই ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে দোষী ব্যক্তি-গোষ্ঠীর পাশাপাশি এর নেপথ্যের কুশীলবদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।সেসাথে, নিম্নোক্ত দাবীগুলো পেশ করছিঃ
১.সাম্প্রতিক সহিংসতাসহ পূর্বের সকল সহিংসতার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
২.ভবিষ্যতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধকল্পে কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ, প্রয়োজনে কমিশন গঠন করতে হবে।
৩.মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের সমানাধিকার, নিরাপত্তা ও সকল গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৪.যেকোন ধরণের সভা-সমাবেশ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাম্প্রদায়িক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য বন্ধ করতে হবে।
৫.শুদ্ধ জ্ঞান চর্চা ও মেধা-মনন বিকাশে সারাদেশে বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক ও ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা এবং গ্রন্থাগার চালু করতে হবে।
৬.সরকারী উদ্যোগে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা, প্রচার ও প্রসার ঘটাতে হবে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, নাগরিকদের মেধা ও মননের বিকাশে শুদ্ধ জ্ঞান চর্চার জন্য বইয়ের ভূমিকা যেমন অপরিসীম, ঠিক তেমনি সকল কূপমণ্ডূকতা দূর করার লক্ষ্যে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আন্দোলন। সকল অপশক্তিকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে এবং চলমান সংকট মোকাবেলায়- দেশ ও প্রবাসের সকল বাঙালি ও নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, বিশেষ করে প্রগতিশীল সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন ও সংগঠকদের এক কাতারে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।
বিবৃতিদাতাঃ
১. প্রবীর বিকাশ সরকার; লেখক ও রবীন্দ্র গবেষক (প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি,জাপান বাংলাদেশ প্রেসক্লাব)
২. ডাঃ শাহরিয়ার সামস সামি; গবেষক, কলামিস্ট ও সাংস্কৃতিক কর্মী (প্রতিষ্ঠাতা, টোকিও বইমেলা) (বাংলাদেশ)
৩. হাবিবুর রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক (বাংলাদেশ)
৪. মোঃ নাজিম উদ্দীন; সাংস্কৃতিক কর্মী,(উত্তরণ, বাংলাদেশ কালচারাল গ্রুপ জাপান)
৫. ডাঃ তাজবীর আহমেদ সাজিদ; গবেষক, বাচিক শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মী (টোকিও বইমেলা, জাপান)
৬. শেখ মিজানুর রহমান; সাংস্কৃতিক কর্মী(টোকিও বইমেলা, জাপান)
৭. হোসাইন মোঃ শরীফ; সাংস্কৃতিক কর্মী (টোকিও বইমেলা, জাপান)
৮. অনিন্দ্য রহমান; আবৃত্তিশিল্পী ও বিতার্কিক (বাংলাদেশ)
৯. আহমেদ জাভেদ চৌধুরী (রনি); শিক্ষক ও গবেষক (বাংলাদেশ)
১০. রুমানা রউফ সোমা; শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক (জাপান)
১১. বিশ্বজিত দত্ত বাপ্পা, সাংস্কৃতিক কর্মী (দলনেতা- উত্তরণ, বাংলাদেশ কালচারাল গ্রুপ জাপান)
১২. নিয়াজ আহমেদ জুয়েল; সাংস্কৃতিক কর্মী,(উত্তরণ, বাংলাদেশ কালচারাল গ্রুপ জাপান)
১৩. আঞ্জুমান আরা (বনু); নৃত্যশিল্পী (আমেরিকা)
১৪. সাজ্জাদ নাঈম; গবেষক (বাংলাদেশ)
১৫. রাগীব নাঈম; গবেষক ও নাট্যকর্মী (বাংলাদেশ)
১৬. মাহমুদা তুলি; ফ্রিল্যান্সার ফটোগ্রাফার (বাংলাদেশ)
১৭. তারেকুল ইসলাম; সাংস্কৃতিক কর্মী (বাংলাদেশ)
১৮. নীল সাধু; লেখক, প্রকাশক, সম্পাদক(মেঘফুল), প্রতিষ্ঠাতা- এক রঙা এক ঘুড়ি (বাংলাদেশ)
১৯. ফারোজান যাবিন সাঈদ; নৃত্যশিল্পী (আমেরিকা)
২০. সৈয়দ রেহান সাঈদ; নৃত্যশিল্পী (আমেরিকা)
২১. গোলাম মাসুম জিকো; সম্পাদক (নিহন বাংলা ডটকম), প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক জাপান বাংলাদেশ প্রেসক্লাব।)
২২. ডাঃ কাওসার আলম; কলামিস্ট ও সাংস্কৃতিক কর্মী (বাংলাদেশ)
২৩. গোলাম আরাফাত নিলয়; স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা (বাংলাদেশ)
২৪. খন্দকার ফজলুল হক রতন; সংস্কৃতজন, (উত্তরণ, বাংলাদেশ কালচারাল গ্রুপ জাপান)
বার্তা প্রেরক,
ডাঃ শাহরিয়ার সামস সামি
মোঃ নাজিম উদ্দীন