এডাম স্মিথ এবং তার স্ত্রী এলিসি লাগরাংঞ্জে গত ২০ শে জানুয়ারী২০১৯ এসেছিলেন বাংলাদেশে। তাদের এই বাংলাদেশ ভ্রমণ সম্পর্কে জানতে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিহন বাংলা ডট কমের উপদেষ্টা সম্পাদক ও গ্লোবাল খুলনার আহবায়ক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন। সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন গুলো দিয়ে দেয়া হয়েছিল। দেশে ফিরেই উত্তর গুলো পাঠিয়ে দিয়েছে। ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে সকলের উদ্দেশ্যে দেয়া হলো।
এডাম ব্রিটিশ নাগরিক এবং ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (বিবিসি) এর ফিল্ম মেকিং ডিপার্টমেন্টে কাজ করেন। এলিস ফরাসি নাগরিক, বর্তমানে এডামের সাথে বৈবাহিক সূত্রে ইংল্যান্ড এ থাকেন এবং উইম্বলডন টেনিস গ্রাউন্ডের সাথে একটা রেষ্টুরেন্টে কাজ করেন।
বাকীটা তাদের মুখেই শুনুন।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে কবে এসেছেন এবং কি কারনে?
এডাম ও এলিসিঃ আমরা বাংলাদেশে এসেছি ২০ শে জানুয়ারি ২০১৯ ভ্রমণের জন্য। এই দেশটি দেখতে, এই দেশের মানুষের সম্পর্কে জানতে, বাংলাদেশের স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে এবং নতুন কিছু জানা ও শেখার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল গুলি দেখতে।
প্রশ্নঃ ঢাকা কেমন লাগলো?
এডাম ও এলিসিঃ ঢাকা আমাদের কাছে অত্যন্ত শব্দ দূষনীয়, ব্যাস্ত ও ট্রাফিক জ্যামের শহর মনে হয়েছে। আমরা সাধারণত একটু নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করি। ঢাকা ঠিক সেই শহর না, যেখানে আপনি যথেষ্ট নিরিবিলি এবং দূষণ মুক্ত পরিবেশ পাবেন।
প্রশ্নঃ ঢাকাতে কোথায় কোথায় ঘুরেছেন?
এডাম ও এলিসিঃ আমরা ঢাকার অদূরে সোনারগাতে গিয়েছি। বিশেষ ভাবে পানাম নগরকে খুব ভালো লেগেছে। পানাম নগরের ব্যবস্থাপক অত্যন্ত আন্তরিকভাবে আমাদের ওই স্থানের সম্পর্কে এবং এর ইতিহাস বিস্তারিত বুঝিয়ে বলেছেন। আমরা পুরনো ঢাকাতে অবস্থান করেছি এবং আহসান মঞ্জিল, বুড়িগঙ্গা নদী, ঐতিহাসিক প্যাডেলযুক্ত রকেট স্টিমার, অনেক মার্কেট, হিন্দু স্ট্রিট, তারা মসজিদ এবং আর্মেনিয়ান চার্চ পরিদর্শন করেছি।
প্রশ্নঃ ঢাকা বা বাংলাদেশ পরিদর্শনের সময় কোন বিষয়টা আপনাদের ভালো লেগেছে?
এডাম ও এলিসিঃ আমরা যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই কাউকে না কাউকে পেয়েছি, যারা আমাদের সহযোগিতা করেছে, সে জায়গাটা সম্মন্ধে আমাদেরকে তথ্য দিয়েছে, সহযোগিতা করেছেন এছাড়াও তারা ঘুরে দেখার জন্য সহযোগিতা করেছে। আমাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছে।
প্রশ্নঃঃ ঢাকা বাদে অন্য কোথায় কোথায় ঘুরেছেন?
এডাম ও এলিসিঃ আমরা ঢাকা থেকে ট্রেনে করে খুলনায় গিয়েছিলাম। উদ্যেশ্য ছিলো তিনদিনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমন। কিন্তু তেমন কোন আইডিয়া ছিলোনা। পরিকল্পনা ছিলো, খুলনা পৌঁছে খোঁজ খবর নিয়ে তবে যাবো। কিন্তু আমাদের ট্রেন যাত্রাটা ছিলো অত্যন্ত আরামদায়ক ও সৌভাগ্যের। কারণ ট্রেনেই পরিচয় হলো জনাব শাহ মামুনুর রহমান তুহিনের সাথে। তার সংগে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তার দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যমে পরদিনই আমাদের সুন্দরবন ভ্রমণের সকল ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল। তার বদান্যতা, আতিথেয়তা আর সহযোগিতায় আমাদের একটা চীর স্মরণীয় ভ্রমণ করেছি। আর প্রসংগত বলতেই হয়, খুলনা আমাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে। খুলনার পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর, মানুষগুলো সহযোগিতা প্রবন, বন্ধুবতসল। আমি আবারও খুলনা আসার জন্য আগ্রহী। কারণ আমাদের কাছে মনে হয়েছে এরাই বাংলাদেশের সুন্দর মানুষদের প্রতিচ্ছবি। জনাব তুহিন আমাদেরকে রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ষ্টাডি ট্যুরের শিক্ষক/ছাত্র/ছাত্রী দের একটা গ্রুপের সাথে সুন্দরবন ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছিলেন। ঐ মানুষগুলোও অসাধারণ! সুন্দরবন ভ্রমণের পুরো সময়টা তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে। তাদের সাথে কাটানো সুন্দর সময়গুলো আমরা চীরদিন মনে রাখবো। আমরা অনেক মজা করেছি, বিশ্বের অন্যতম সেরা ম্যানগ্রভ বন সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য্য প্রাণ ভরে উপভোগ করেছি। বন ভ্রমণের সাথে আমাদের সমূদ্র সৈকত ভ্রমণের মজাটাও ছিলো অনেক আনন্দদায়ক ও অপ্রত্যাশিত। একই সংগে সুন্দরবন এবং সমূদ্র সৈকত দেখার সুযোগ ওখানেই আছে। জামতলা সৈকত আমাদের বাড়তি আনন্দের উপকরণ ছিলো। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং হরিন ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী দেখার জন্য আমরা সবাইকে আহবান জানাই। অন্ততঃ একবার হলেও সকলেরই সুন্দরবন ভ্রমণ করা উচিৎ। আমরাও পরিচিতদের সুপারিশ করবো, বাংলাদেশ তথা সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য। এছাড়াও আমরা বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ, খানজাহান আলীর মাজার ও অন্যান্য পুরাকীর্তি স্থাপনাগুলির সৌন্দর্য্য উপভোগ করেছি।
প্রশ্নঃ কোন ধরনের খাবার উপভোগ করেছেন এই ভ্রমণে?
এডাম ও এলিসিঃ আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের খাবার অনেক মজা করে খেয়েছি। বিশেষ করে ভাত এবং ডাল অনেক সুস্বাদু। বাংলাদেশের প্রতিটি ফল এবং শাকসবজি অনেক মজাদার। বিশেষ করে লবণ মিশিয়ে শসা এবং ডাবের পানি অসাধারণ! অবশ্যই সুজির হালুয়া একটা অসাধারণ খাবার।
প্রশ্নঃ ঢাকার কি সম্ভাবনা দেখছেন?
এডাম ও এলিসিঃ আমরা মনে করি, রাজধানী হিসেবে ঢাকার গুরুত্ব একটু বেশি। কিন্তু ঢাকার বর্তমান যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলো একটা ভালো টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে দূর করা উচিৎ। বাইরের পরিবেশের কারনে এখানকার মানুষেরা অনেক যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি, এখানকার মানুষেরা অনেক দয়ালু, বন্ধুবৎসল এবং পজিটিভ। তাই সবাই মিলে চেষ্টা করলে অনেক সম্ভাবনা আছে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
প্রশ্নঃ ঢাকাকে আরো উন্নত করার জন্য কোন পরামর্শ আছে?
এডাম ও এলিসিঃ আমরা মনে করি, ঢাকার সাস্থ্য সম্মত পরিবেশের উন্নয়ন, ঢাকার উপরে যে বিপুল জনসংখ্যার চাপ কমানো, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডগুলো ঢাকার বাইরের জেলা গুলিতে স্থানান্তরিত করা, মোট কথা ডিসেন্ট্রালাইজেশনের মাধ্যমে ঢাকার উপরে চাপ কমিয়ে ফেললে অনেক মনোরম হবে ঢাকা। ঢাকার মেট্রোরেল সিস্টেম খানিকটা উপকারে আসবে। আর এখানকার শিল্প, সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ। এটাকে ধরে রাখতে হবে।
প্রশ্নঃ আপনার দেশ কোথায় এবং আপনার পেশা সম্পর্কে একটু জানান।
এডাম ও এলিসিঃ আমি এডাম স্মিথ, ব্রিটিশ নাগরিক এবং ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের (বিবিসি) এর ফিল্ম মেকিং ডিপার্টমেন্টে কাজ করি। এলিস লাগরাঞ্জে ফরাসি নাগরিক, বর্তমানে আমার সাথে বৈবাহিক সূত্রে ইংল্যান্ড এ থাকেন এবং উইম্বলডন টেনিস গ্রাউন্ডের সাথে একটা রেষ্টুরেন্টে কাজ করেন। ধন্যবাদ।