Breaking News

ভূমিকম্প ও সুনামির ভয়াল সেই দিনটিকে স্মরণ করছে জাপান

২০১১ সালের এই দিনে মহা ভূমিকম্প, সুনামি আর পারমানবিক কেন্দ্র বিস্ফোরণে ভয়াবহ এক বিপর্যয় নেমে এসেছিল জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে৷ ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া সেই দিনটিকেই আজ স্মরণ করছে শোকসন্তপ্ত জাপান ।

জাপানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এনইচকে জানিয়েছে, ২০১১ সালে মহা-ভূমিকম্প এবং সুনামির আঘাত হানা এলাকার লোকজন ঐ দুর্যোগের অষ্টম বর্ষ পূর্তির একদিন আগেই রোববার নিহতদের স্মরণে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। গতকাল ফুকুশিমা জেলার ইওয়াকি শহরে প্রায় শতাধিক ব্যক্তি একটি স্মারক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তয়োমা এলাকার প্রায় ৪শ দালান সুনামির ঢেউয়ে ভেসে গেলে ৭৬ ব্যক্তির মৃত্যুর পাশাপাশি ৭ জন নিখোঁজ হন।

স্মারক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা এক মুহূর্তের নীরবতা পালনের পাশাপাশি এ মাসে নির্মাণকাজ শেষ হওয়া একটি নতুন স্মারকস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিধি এবং সুনামিতে স্বামী হারানো চোকো কানারি বলেন, নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে নিজের বেদনাকে স্মরণের পাশাপাশি তিনি তার নিজ-শহরকে সারাজীবন ভালবেসে যাবেন।

২০১১ সালের ১১ই মার্চ ঠিক ২টা ৪৬ মিনিটে শুরু হয়েছিল প্রচণ্ড ভূমিকম্প৷ রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার সেই ভূমিকম্পের ফলে শুরু হয় সুনামি৷ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফুকুশিমার পারমাণবিক কেন্দ্র৷ ভূমিকম্পের তীব্রতায় পারমানবিক চুল্লি ছিদ্র হয়ে যায়৷ তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে বিশাল এলাকায়৷ সুনামিতে সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর হোক্কাইডো থেকে শুরু করে ওকিনাওয়া পর্যন্ত এলাকার প্রায় সব ঘর-বাড়িই ধ্বংস হয়ে যায়৷ সেদিনের সেই প্রাকৃতিক এবং পারমানবিক চুল্লির বিপর্যয়ে মারা যায় প্রায় ১৮ হাজার ৫শ’ মানুষ৷ অন্তত ২ হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ।

এদিকে রাজধানী টোকিয়োতে আয়োজিত এক স্মরণসভায় চার বছর আগে প্রাণ হারানো মানুষদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক লক্ষ মানুষের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়৷ প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং ফুকুশিমা বিপর্যয়ের ক্ষতিগ্রস্তরাও এ স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন।

৮ বছর পেরিয়ে গেলেও ফুকুশিমা বিপর্যয়ের রেশ এখনো পুরোপুরি কাটেনি৷ ফুকুশিমার দায়িচি পারমানবিক চুল্লির আশপাশের এলাকায় এখনো তেজষ্ক্রকীয়তা ছড়িয়ে থাকায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ নিজেদের ফিরতে পারেনি।

 

ক্ষতিগ্রস্ত একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত

প্রাকৃতিক দুর্যোগের স্মারক স্বরূপ, ২০১১ সালে সুনামির আঘাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবন আজ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। কেসেননুমা শহরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রায় ৬০ ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীরা, নিহতদের উদ্দেশ্যে এক মুহূর্ত নীরবতা পালন করেন। ২০১১ সালে আঘাত হানা সুনামি ৪ তলা বিদ্যালয় ভবনের সর্বোচ্চ তলা পর্যন্ত পৌঁছেছিল।

শহরের মেয়র শিগেরু সুগাওয়ারা, প্রতি মুহূর্তে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর পরিবর্তন সাধিত হয়ে চললেও স্মারকটি লোকজনকে সুনামির ভয়াবহতা সম্পর্কে অব্যাহতভাবে স্মরণ করিয়ে দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আগতদের, বিদ্যালয় ভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় যেখানে শ্রেণীকক্ষের মধ্যে এখনও ধ্বংসাবশেষ এবং বইপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাঁরা, ভেসে এসে ভবনের ৩য় তলায় পড়ে থাকা একটি মটরগাড়িও দেখেন। দর্শনার্থীরা, মনোযোগের সঙ্গে গাইডের ব্যাখ্যা শোনার পাশাপাশি ঘুরে ঘুরে বিদ্যালয় ভবনের অভ্যন্তরে দুর্যোগের ক্ষতচিহ্ন প্রত্যক্ষ করেন।

পশ্চিম জাপান থেকে আগত ২০র কোঠার বয়সী একজন নারী, দুর্যোগের ক্ষতচিহ্ন প্রত্যক্ষ করে নিজের বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন বলে উল্লেখ করেন।

masum86cu@yahoo.com

About admin

Check Also

১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন জাপানি নভোচারী ফুরুকাওয়া

জাপানের নভোচারী ফুরুকাওয়া সাতোশির দ্রুত হলে ১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দ্বিতীয় ভ্রমণ নির্ধারণ করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *