অত্যাধিক দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা, বিশেষ করে উৎপাদন খাতের শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা বেশি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আইএলও’র ‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিভিন্ন দেশে বাজার সেবায় অস্থায়ী শ্রম বণ্টন কমে আসছে ও একই শ্রেণিভুক্ত হয়ে ওঠছে। তবে এখনো কিছুই দেশে পরিবহন, গুদামজাতকরণ, যোগাযোগ, বাসস্থান ও খাদ্যসেবার মতো খাতে শ্রম বণ্টনের হার এখনো বেশিই আছে।
এমনকি বাজার বহির্ভূত সেবাগুলোতেও অবস্থা একইরকম। মোট নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীর প্রায় ২০ শতাংশের মতো সাময়িক সময়ের কাজ করে থাকেন। সাময়িকভাবে কর্মী সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে।
এদিকে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে লাখ লাখ শ্রমিক অত্যধিক দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, আইএলও সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করাকে ‘অত্যাধিক দীর্ঘ সময়’ হিসেবে ধরেছে।
আইএলও বলেছে, দেশ ভিত্তিতে কর্মঘণ্টায় পরিবর্তন দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার অভিযোগ আসে উৎপাদন খাতের কর্মীদের কাছ থেকে। বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারের উৎপাদন খাতের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ শ্রমিকরা সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি কাজ করেন। সেবাভিত্তিক খাতগুলোতে এই হার সাধারণত কম থাকে। যদিও খাদ্য ও বাসস্থানের মতো কিছু বাজার সেবায় শ্রম বণ্টনের হার বেশি।
বাংলাদেশে উৎপাদন খাতে সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করছেন প্রায় ৪৫ শতাংশের বেশি শ্রমিক। অন্যদিকে পরিবহন, গুদামজাতকরণ ও যোগাযোগ খাতে কাজ করছেন ৩৫ শতাংশের বেশি শ্রমিক।
বাংলাদেশের সমপর্যায়ের দেশগুলোর মধ্যে কেবল মঙ্গোলিয়ায় এই হার বেশি। যদিও সেখানে উৎপাদন কারখানার অত্যাধিক কাজ করার হার বাংলাদেশের চেয়ে কম, ৪০ শতাংশের নিচে।
আইএলও’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক উন্নতি, কৃষিখাত উন্নয়নের ওপর নির্ভরতা হ্রাস পেয়েছে। এতে পুরো এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে কমেছে দরিদ্রতার হার। তবে সবচেয়ে বেশি কমেছে এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে।
তবে নিয়ম মানার অভাব ও বড় আকারে যথাযথ কাজের স্বল্পতার কারণে দরিদ্রতার হার একেবারে কমছে না। সব মিলিয়ে পুরো এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে দরিদ্রসীমার নিচে রয়েছেন ২২ শতাংশ বা ৪১ কোটি শ্রমিক। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় এই মাত্রা বেশি।