নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা স্বাভাবিক নয় বলে মনে করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, গৃহবধূকে নির্যাতনের এমন বীভৎসতা স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। এ ঘটনা ‘ষড়যন্ত্র’ হতে পারে। বিশেষ করে বিবস্ত্র করার পর ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে আপলোড করা ভয়ঙ্কার এবং কুরুচিপূর্ণ ঘটনা। সোমবার (৫ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এটিকে একটি নিছক সামাজিক অপরাধ বলা যায় না! মিডিয়ায় নির্যাতনের বর্ণনা দেখলাম। গা শিউরে উঠল! এর থেকে খারাপ কিছু হতে পারে না। আমার কাছে ষড়যন্ত্র মনে হয়েছে। তবে তদন্ত করলেই সব বেরিয়ে আসবে।
‘কী কারণে ষড়যন্ত্র মনে করছেন’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপরাধীদের আটক করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত হবে। জিজ্ঞাসাবাদেই সব বেরিয়ে আসবে। বিচারের ব্যাপারে আপনারা অবগত। আমাদের প্রসিকিউশন শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে আলোচিত মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে। এমন মামলাগুলো সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আমলে নিয়ে আমরা অ্যাকশনে যাচ্ছি। অপরাধীরা সাজাও পাচ্ছে। এটি তো প্রমাণিত হচ্ছে। এই ধারা চলবেই।
প্রসঙ্গত, ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকায় ওই গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এর পর গৃহবধূকে ধর্ষণ করে তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। সেটি ছড়িয়ে দেয় ইন্টারনেটে। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, নির্যাতনকারীরা ওই গৃহবধূর পোশাক কেড়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু একটা বলতে থাকেন। তিনি প্রাণপণ নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন এবং হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন, তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু তারা ভিডিও ধারণ বন্ধ করেননি। বরং হামলাকারীরা তার মুখে ও শরীরে লাথি মারেন। এর পর তার শরীরে একটা লাঠি দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকেন। এ সময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার উল্লাস প্রকাশ করে ‘ফেসবুক’ ‘ফেসবুক’ বলে চিৎকার করে আরেকজন।
এদিকে এ ঘটনার পর অভিযুক্ত স্থানীয় দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা নির্যাতিত গৃহবধূর পরিবারকে কিছু দিন অবরুদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে তারা পুরো পরিবারকে বসতবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেন। এ কারণে ঘটনাটি স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ প্রশাসনের অগোচরে থাকে।
তবে ওই ভিডিওচিত্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনার ৩২ দিন পর রবিবার (৪ অক্টোবর) গৃহবধূকে নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। পরে ওই নারী রবিবার (৪ অক্টোবর) রাতে মামলা করেন।
বেগমগঞ্জের ওসি মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ চৌধুরী জানান, নির্যাতনের শিকার নারী বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় রবিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে পৃথক দুটি মামলা করেন। একটি মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। মামলার পর রবিবার (৪ অক্টোবর) রাতে প্রধান আসামি বাদল ও দেলোয়ারকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।