মৃত্যুঞ্জয় সরদার
আজকের দিনে আমরা অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি কিন্তু রাজনীতির সংজ্ঞা ও নীতি ও রাজনীতির টা কি সেটা অনেকেই সঠিকভাবে জ্ঞান উপলব্ধি করিনি। গ্রাম্য রাজনীতির হিংসাত্মক মনোভাব, কেউ ভয়ে রাজনৈতিক নেতাদের পেছনে ঘুরে বেড়ায়। কেউ স্বার্থের জন্য আর কেউ মানুষের ক্ষতি করার জন্য।সারা ভারতবর্ষে তথা বিশ্ব গ্রাম্য রাজনীতির নেতাদের রাজনীতির রং নেই, তেমনি নেতা সর্বোচ্চ গ্রামে বিরাজমান।এই লেখার রাজনীতির গবেষণার বাস্তব ইতিহাসের কথা আমি আমার কলম তুলে ধরছি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে।
আমাদের রাজনীতি করার কারণটা কী ছিল? আমি যে রাজনীতিতে পুরোপুরিভাবে সচেতন হওয়া টা কী অন্যায়। যতটুকু পেরেছি সক্রিয়ভাবে যোগ দিইনি তার কারণ তো একটা ছিল। কারণটা হচ্ছে, রাজনীতি ছাড়া কোনো মানুষ হয় না। যেমনি ঠিক কথা, তেমনি এই কথাটি ভুল ব্যাখ্যাও রয়েছে । জন্তু-জানোয়ার থাকতে পারে যাদের কোনো রাজনীতি নেই, কিন্তু রাজনীতি ছাড়া মানুষ হয় না। কিন্তু আজও অনেক মানুষ আছে রাজনীতি বিশ্বাস করে না ,মানবতা উদ্যোগে কাজ করে। রাজনীতি করে তুমি যদি মনে কর দেশটাকে লুট করবে, দেশের জনগণের ওপর ক্ষমতার অপব্যবহার করবে, দেশটাকে শাসন করবে এবং সেই কারণে যত রকম পন্থা আছে, সবই তুমি অবলম্বন করবে; মানুষ বর্তমান সেই রাজনীতির জন্য তো আমি রাজনীতি করিনি। আর ভবিষ্যতে কোনদিন রাজনীতির সাথে যুক্ত হবো না।রাজনীতি মানুষকে খুন করতে পারে, যে রাজনীতি বাবা ছেলের মধ্যে ভাগ করে দিতে পারে।
যে রাজনীতি অসহায় মানুষকে আরো অসহায় করে দিতে পারে, রাজনীতি প্রকৃত সত্যবাদীদের মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারে।যে রাজনীতি যোগ্য মানুষের অভাব আছে,যে ইতিতে রাজনীতিতে অযোগ্য মানুষেরা টাকা কামানোর জন্য আসে ,সেই রাজনীতিকে আমার মত অনেক ব্যক্তিত্বরা ঘৃণা করে।তবেই দেশের রাজনীতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে না পেঁৗছার পেছনে আপনাদের মতো যারা বুদ্ধিজীবী আছেন, তাদের ব্যর্থতাও ছিল?আজ আমার এই লেখার মধ্যে ষষ আমি যা বলেছি, তাতে তো সবই স্পষ্ট। আমাকে কি নাম করে করে বলতে হবে? ব্যর্থতা যদি বল, তবে বুদ্ধিজীবীদের কথা বলবে না কেন? রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা নয় কেন? শিক্ষক সমাজের নয় কেন? শিল্পী-কবি-সহিত্যিকদের নয় কেন? আমি আমার দায়কে অস্বীকার করব কেন? এই ব্যর্থতা সবার।আজকের দিনে বই পড়ে আলোকিত মানুষ হওয়ার কথা বলা হয়। আসলেই কি বই পড়ে আলোকিত মানুষ হওয়া যায়? যে কৃষক জীবনে কোনো বই পড়েনি, অথচ সে বারো রকমের ধান উৎপাদন করছে। তার উৎপাদিত শস্যের বিনিময়ে দেশের অর্থনীতি টিকে আছে।
তাহলে সে কি আলোকিত মানুষ নয়? আসলে এর দার্শনিক ব্যাখ্যা কী?মজার ব্যাপার হচ্ছে, মানুষ কথা বলতে জানে। বন্যপ্রাণীর সঙ্গে মানুষের তফাত এখানেই। মানুষ যখন কথা বলে তার সব কথাই কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষ কিছু কথা বলে কিছু কথা না বলার জন্য। অর্থাৎ একটা কথা বলবে না বলেই একটা কথা বলছে। তার মানে, মানুষ কথা বলছে কথা বলার জন্য এবং কথা চাপা দেওয়ার জন্য। দু’ভাবেই কথা বলে মানুষ। কাজেই আলোকিত মানুষ ব্যাপারটাও কথা না বলার জন্য একটা কথা। যে শস্য উৎপাদন করে সে তো নিজেই আলোকিত। সে আলো ছড়ায়। তাকে যদি এসব কথা বল, সে শুনে বলবে, তাকে বুঝি ঠাট্টা করা হচ্ছে। বলা উচিত, এমন একটা মানুষ দরকার যে আলো ছড়িয়ে দিতে পারে। যেমন সলিমুল্লাহ খান খুব মজা করে বলেছেন, তাহলে কি আমরা ‘লোক’ থেকে ‘অলৌকিকে’ যাব, ‘আলো’ থেকে ‘আলৌকিকে’ যাব? আসলে এসব ‘আলোকিত মানুষ’ একটা উপমা, মেটাফোর। মেটাফোরের অর্থ নানাভাবে করা যায়। আলোকিত লোক ছাড়া সমাজের উন্নতি হবে না_ এ কথা দিয়ে তো নির্দিষ্ট কিছু বোঝায় না। এসব কথা আমি বলিও না কখনও।তার মানে, সর্বক্ষেত্রে বই মানুষকে আলোকিত করে না?সেটা বলা মুশকিল। কী বই পড়ছ সেটা দেখতে হবে। বই পড়ে ঘন অন্ধকারের মধ্যে ডুবে যাবে_ এমন বইও তো আছে!
ভূত-প্রেতে বিশ্বাস করবে এমন বই কি নেই? তা যদি হয়, যে আদৌ বই পড়েনি সে আলোকিত হতে অসুবিধা কী আছে? কারণ, সে তো শিখছে। বই পড়ে যা শিখবে, তার চাইতে অনেক বেশি শিখছে সে প্রকৃতি থেকে। বেঁচে থাকার ভেতর দিয়ে সে শিখছে।বর্তমান আমরা যুব সমাজটা যা দেখছি তাই শিখছি,কি দেখছি আজকের দিনে দাঁড়িয়ে হিংসা খুনোখুনি অবিচার নোংরামি রাজনীতি ।আর লোক দেখানো অন্যায়ের প্রতিকার এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার দাবিতে যেমন কথাবার্তা চলে, সেই রকম এই অন্যায়ের প্রতিকার অন্বেষণ এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার নিরন্তর প্রয়াস কথোপকথনের প্রক্রিয়াকে দ্বন্দ্বদীর্ণ করে তোলে। পশ্চিবঙ্গের বর্তমান শাসকরা সদ্য ক্ষমতায় এসেছেন। রাতারাতি চমকপ্রদ কিছু করার ক্ষমতা তাঁদের নেই। জনসাধারণ সে আশাও করে না। কিন্তু নতুন শাসকরা কথোপকথনের এই রাজনীতির সমস্যা এবং প্রতিকূলতার কথা ভেবে রেখেছেন কি?আশার কথা, পশ্চিমবঙ্গ এক ছোট আকারে হলেও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চলেছে। সমাজের নিচু স্তর থেকে তথাকথিত অল্পশিক্ষিতরা রাজনৈতিক নেতৃত্বে উঠে আসছে।
মেয়েদের উৎসাহ জেগেছে ব্যাপক ভাবে। বাঙালি ভদ্রলোকেরা আশাহত। আর এ-ও লক্ষ করার মতো: সাম্প্রতিক কালে বাঙালির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এ রকম ভাবে এক জনের ওপর এত নির্ভর করেনি।আজ নির্ভরতার কারন কি? আমাদের অনেকের কাছে অজানা! আমার নিজের এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে বোধগম্য হয়নি ।তবে বর্তমানের রাজনীতির ইতিহাস লেখাও শক্ত। ইতিহাস লিখতে গেলে যে প্রয়োজনীয় এবং নিরাপদ দূরত্ব লাগে, তার সুযোগ এখানে নেই। পরে ইতিহাসবিদরা তাঁদের কাজ করবেন, কিন্তু রাস্তাঘাটে, সমাবেশে, বৈঠকে সাধারণ বাঙালি ইতিমধ্যে ইতিহাসচর্চা শুরু করে দিয়েছে। দীর্ঘ তেত্রিশ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের স্বরূপ নিয়ে যে যার মতো পরিবর্তনের ইতিহাস সাজাচ্ছেন।
এই ইতিহাস নিজেকে জড়িয়ে আমরা যে কাল পেরিয়ে এসেছি, পেরোচ্ছি, আমরা কী করে চালিত, শাসিত হতাম, আর আজ কী করে হব, তার কথাকাহিনি। বর্তমানকে ঘিরে এই ইতিহাসচর্চায় আত্মপ্রতিফলন ঘটতে বাধ্য। আর যাই হোক , যারা এই বাংলায় নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃত সৃষ্টি করতে চাইছে, তাদের প্রতি অবিচার অন্যায় অত্যাচার সবই হবে। প্রয়োজনে তাদের খুন হতে পারে, আজকের বাংলায় এই হিংসার রাজনীতি চর্চা জর্জরিত। পাওয়ার আশায় যাঁরা অপেক্ষা করে আছেন নতুন এক আরম্ভের জন্য, তাঁদের অবশ্যই অনেক রক্তাক্ত পথ অতিক্রম করতে হবে। দেখতে হবে বোবা করে দেওয়া রক্তঝরা অনেক কঠিন মুহূর্ত। দেশে এবং বিশ্বজুড়ে। কোথাও পেশোয়ারের স্কুলে বাচ্চা ছেলেদের খুন করা হবে ইসলামের নামে তো কোথাও ড্রোন হামলায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এই কাজ করবে নিজেদের বাড়িয়ে তোলা মৌলবাদকে ধ্বংস করার নামে।
কোথাও জামাতী ইসলামী কাফের এর কল্লা নামাবে বা ইসলামিক স্টেট, বোকো হারাম, আল কায়দা, তালিবানরা গুঁড়িয়ে দেবে সভ্যতার চেনা যাবতীয় ছককে তো কোথাও ঘটানো হবে গুজরাট ২০০২ বা মুসলিম সংখ্যালঘু সংঘারের স্টেট স্পনসর্ড টেররিজম। এর থেকেও বেশি নিজে উপলব্ধি করতে পারবে, নিজের জীবনের প্রতি যে অবিচার অন্যায় অত্যাচার প্রয়োজনে খুন করে দিতে পারে। রাজনীতির এই কুসংস্কার ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার মতন, এমন কোন রাজনীতিবিদ এই বাংলার বুকে আজো পর্যন্ত এসেছে কিনা আমার জানা নেই। এই জঘন্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই রাস্তা পরিবর্তন।
এই পটপরিবর্তনের একটা অথবা একগুচ্ছ আর্থ-সামাজিক কারণ আছে ঠিকই, কিন্তু সমান গুরুত্বপূর্ণ হল শাসনপ্রণালীগত কারণ। বামফ্রন্টের সাফল্যের উপাদান যেমন শাসনপ্রণালীর মধ্যে নিহিত ছিল, তেমনই তার ব্যর্থতার পিছনেও শাসনপ্রণালীগত কারণ আছে। এটাই বাস্তব।সেই বাস্তবতা বোঝার উপায় কী? তা বোঝার আগে আরও একটা দুটো কথা বোঝা দরকার। এক সময় চিনে মনে করা হত, সম্রাটের শাসন স্বর্গাগত আদেশ এবং বিধানের জোরে চলে। তাই তার ক্ষয় নেই। অনুরূপ অতিকথা বামফ্রন্ট শাসনকালে বহু বুদ্ধিজীবী, সমালোচক ও চিন্তাবিদকে আচ্ছন্ন করেছিল।
ফলে, যাকে বলা যায় সমাজের প্রবহমান ইতিকথার সংঘর্ষপূর্ণ চরিত্র, তার থেকে এই বুদ্ধিজীবীরা চোখ সরিয়ে নিয়েছিলেন। অনেক সময় ভুলে থাকতে চেয়েছিলেন সমাজের সংঘর্ষ ও দ্বন্দ্ব। এঁদের ইতিহাসবোধ ছিল অতিকথায় আচ্ছন্ন। এঁরা বিস্মিত হয়েছেন, তবে তারও বেশি আহত হয়েছেন এই পরিবর্তনের চপেটাঘাতে।তবে
একসময় মনে করা হয়েছিল আমাদের এই সময়টা সামন্ততন্ত্র, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদ, কুসংস্কার, অপবিজ্ঞান সহ সমস্ত অধিবিদ্যার দর্শন ও তার যেন বা ক্রম হ্রাসমান সামাজিক প্রভাবকে ধীরে ধীরে পরাভূত করে সমাজতন্ত্র, বিজ্ঞান মনস্কতা, হেতুবাদী দর্শনের পথে এগিয়ে যাবে।
জীবনানন্দের ভাষায় বলতে গেলে “এ পথে আলো জ্বেলে এ পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে”। হতে পারে “সে অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ,” কিন্তু হবে, একদিন হবে। এই স্বপ্নকে ভেঙে দিয়ে বাস্তবে অবশ্য বিপরীত ঘটনাগুলোকেই চোখের সামনে দেখতে দেখতে আমরা বেড়ে উঠলাম। গত শতাব্দীর শেষ দশক থেকে যেন ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গর মধ্যে দিয়ে প্রগতির বিপরীত পথে যাত্রা শুরু হল। বিশ্বজুড়ে এবং আমাদের দেশেও। সোভিয়েত সমাজবাদের পতন হল, বার্লিনের প্রাচীর ধ্বসে পড়ল, ওয়াশিংটন কনসেন্সাস ও বিশ্বব্যাঙ্ক – আই এম এফ চালাতে লাগলো কর্পোরেট ঘরানার মুনাফা সর্বস্ব দুনিয়ার অর্থনীতি, ধারা পাল্টালো মাও সে তুং-এর চিনও, ইরান সহ নানাদেশে ইসলামিক বিপ্লব হল, মুক্তিযুদ্ধে জন্ম নেওয়া ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষিত হল ইসলাম আর ভারতে বাবরি মসজিদকে ধুলোয় লুটিয়ে দেওয়া হল, কেন্দ্রীয় ক্ষমতা দখল করল হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে নয় দশক অতিক্রম করা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের রাজনৈতিক মুখ ভারতীয় জনতা পার্টি।
সব কিছুই যেন একটা বিভেদের রাজনীতি, মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ রাজনীতি। এই ধর্মকে ভিত্তি করে রাজনীতি করতে গিয়ে ভারতবর্ষে সংস্কৃতিকে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছি অসুস্থ রাজনীতির থেকে আমরা দূরে সরে চলে যাচ্ছি।বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভারতবর্ষে অন্যান্য রাজ্যের থেকে একটু অন্যরকম। সেটা এই লেখার মধ্যে একটু ব্যাখ্যা না দিলে এই লেখাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে এই বাংলার জন্য।
১৯৭৭-এ পশ্চিমবাংলায় যে প্রশাসনব্যবস্থা শুরু হয়, তার কিছু কিছু অভিনব দিক ছিল। সর্বাপেক্ষা অভিনব দিক ছিল সমাজে হিংসা কমানো। এক নতুন বৃহত্তর রাজনৈতিক সমাজ নির্মিত হল নানা দিককে অন্তর্ভুক্ত করে। স্বল্প কিছু অধিকার সীমিত ভাবে স্বীকৃত হল।
ভাগচাষির অধিকার, শ্রমিকের সংগঠনের অধিকার, এই সীমাবদ্ধ অধিকারের অন্যতম।ফ্রন্ট ছিল এই রকমই এক শাসনকৌশল। ভোটের অঙ্ক ছাড়াও মিলেমিশে শাসন করার এটা ছিল এক নতুন রীতি। তেমনই দল দিয়ে প্রশাসনকে শক্ত করা ছিল অন্য এক রীতি বা কৌশল। এই সব কৌশল দিয়ে হিংসা প্রশমিত হল। কিন্তু হিংসা নিয়ন্ত্রণের নামে বন্ধ করা হল অন্যায়ের প্রতিকার। বিগত যুগের কোনও অন্যায়ের প্রতিকার হল না। অন্যায়কর্মে যুক্ত আমলা, পুলিশ অফিসার, রাজনীতিবিদ সবারই নতুন সৌরমণ্ডলে স্থান হল। এই নতুন দেওয়া-নেওয়া, শাসনের সম্পদ ভাগাভাগি করে খাওয়া, পান্ডে শেঠ মাস্টার ইত্যাদিদের দিয়ে শাসন বলবৎ রাখা, দাতাগ্রহীতা সম্পর্কে গ্রামবাংলাকে বেঁধে রাখা এ রকম বহু উপায়ে এই নতুন শাসনরীতি আমাদের ওপর চালু হল। শাসন মেনে নাও, চেষ্টা করব যাতে তুমিও কিছু পাও, কিন্তু প্রতিবাদ কোরো না, অধিকারবোধে জেগে উঠো না, তা হলে শাস্তি অনিবার্য এই ভাবে বাংলা চালিত হল।
এই বিষবৃক্ষের ফল রাজারহাট, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, জঙ্গলমহলে বহু হত্যা আর নির্বিচার নিপীড়ন। রাজনৈতিক সমাজ নির্মিত হয়েছে, গণতন্ত্র প্রসারিত হয়েছে এই কায়দায়। এই সর্বব্যাপী হিংসাকে ফিরিয়ে আনার জন্য তো ১৯৭৭-এ পরিবর্তন আসেনি। এ সবের ইতিহাস কেমন ভাবে ২০০৬ থেকে ২০১১ এই পাঁচ বছরের ঘনীভূত সংঘর্ষকালে পরিণত হল, তার জন্য পুরনো বছরগুলোর নানা ঘটনাকে দিকচিহ্ন হিসাবে বুঝতে হবে। ভিখারি পাসওয়ানের অন্তর্ধান হোক আর পটু মুড়ার অনাহার মৃত্যু হোক তার নানা স্বাক্ষর এখনও সমাজে রয়েছে। এই সব ঘটনা নানা দিক থেকে তার পরিণতিসূচক স্বাক্ষর রেখে গিয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা, এই সব স্বাক্ষর জনচৈতন্যে আছে। সেই দিকচিহ্নগুলিকে খোঁজার দক্ষতা থাকলে গত তেত্রিশ বছরের শাসনের অকথিত ও অর্ধকথিত ইতিহাস বোঝা যাবে। এটা শুধু বুদ্ধিবৃত্তির বিষয় নয়। গণতন্ত্রের একটা বড় দিক তার আত্মচৈতন্য।