পৌষের কনকনে শীতে নতুন ধানের চালের গুড়ায় তৈরী পিঠার স্বাদ অতুলনীয় । নগর সভ্যতা এবং নাগরিক ব্যস্ততা কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু কিন্তু পিঠার স্বাদ-আকর্ষন এখনও দুর্নিবার, তাই আমাদের শহর-নগরের ফুটপাতে শীতের সকালের পিঠার জন্য অনেকেই লাইনে দাঁড়ান । আর সেই পিঠা যদি হয় মমতাময়ী মা-খালা,চাচী-ফুপু বা নিকটাত্মীয় পরিবার-পরিজনদের তৈরী, সেই পিঠার স্বাদ ভাষায় প্রকাশ করা দুষ্কর, কল্পনাতে জিহব্বায় রস আসে । দুর্ভাগা প্রবাসীদের মধ্যে কয়জনেরইবা ভাগ্যে জুটে ফিবছর শীতকালে দেশে যাওয়ার । তাই বলে শীতের পিঠার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবেন ! সেই প্রবাসীদের অতৃপ্ত হৃদয়কে কিঞ্চিত লাঘবের প্রয়াসে জাপানের হাঁড়-কাপানো শীতে গত ২৭ জানুয়ারী রবিবার সাইতামা বাংলা সোসাইটি আয়োজন করেছিল পিঠা-পুলির উৎসব পৌষ মেলা-২০১৯ ।
মেলায় পিঠা প্রেমিকদের ব্যাপক উপস্থিতি পৌষ মেলাকে মিলনমেলায় পরিণত করেছিল । মা-খালাদের যোগ্য উত্তরসূরি ভাবী-বৌদিদের শৈল্পিক মনণ এবং নান্দনিক কারুকার্যে ভরপুর আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা-পুলির নয়নাভিরাম ডিসপ্লে সবাইকে বিমোহিত করে । পিঠার আঞ্চলিক নাম এবং একই পিঠার অঞ্চল বিশেষ কারুকার্য এবং স্বাদের মধ্যে ভিন্নতা ছিল লক্ষ্যনীয় । পৌষ মেলায় ভাবী-বৌদিদের নিয়ে আসা পিঠা, পায়েস এবং মিষ্টান্ন সামগ্রীর মধ্যে ছিল যথাক্রমে পাইচ পিঠা, ছেঁবো পিঠা, নকশী, দুধ চিতই, বিবিখানা, দুধ পুলি, গজা, ভাপা, পোয়া, ডিম পিঠা, ফুলঝুরি, পাকন, মুরালী, পান্থ পিঠা, চুই পিঠা, পাটিসাপটাপটা, সুজি রসমঞ্জরী, ঝিনুক পিঠা, কলা পিঠা, পুলি, শুটকী পিঠা, মালপোয়া, কামরাঙ্গা পিঠা, গ্লাস পুডিং, ডিম পুডিং, কালোজাম এবং শাহী জিলাপী ।
সাইতামা বাংলা সোসাইটির আয়োজিত পৌষ মেলাটি মেলার সাধারন ধারনা থেকে একটু ব্যতিক্রম ছিল অর্থাৎ মেলায় কোন স্টল এবং বিকিকিনির ব্যবস্থা ছিল না । সংগঠন সংশ্লিষ্ট ভাবী-বৌদিরা স্বউদ্যোগে নিজ-নিজ বাসায় তৈরীকৃত পিঠা-পুলি নিয়ে এসেছিলেন, এতে ২৭ পদের পিঠা-পুলি ছিল, যা সবার ইচ্ছানুযায়ী খাওয়ার জন্য অবারিত ছিল । তবে একই নামের পিঠা একাধিক জন নিয়ে আসার কারনে সর্বমোট ৩২টি প্লেটে তা ডিসপ্লে করতে হয়েছে । এছাড়াও সংগঠনের পক্ষ থেকে সবার জন্য মধ্যাহ্ন ভোজের ব্যবস্থা ছিল ।
মধ্যাহ্ন ভোজের পর পিঠা-পুলি উৎসবের শুভ-উদ্বোধনে সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য জনাব নুরুল হক-রহমান, নৌ-প্রকৌশলী জনাব তাপস বড়ুয়া, ইঞ্জিনিয়ার শ্রী অঞ্জন দাস এবং সংগঠনের অন্যতম শুভাকাংখী জনাব মুস্তাফিজুর রহমান লিটন । বক্তরা মেলায় আগত সবাইকে পৌষের শুভেচ্ছা জানান এবং এই আয়োজনের মূল কারিগর ভাবী-বৌদিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং একসাথে এত পিঠার সমারোহ দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন । বক্তারা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বলেন সারা জাপানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাঙ্গালীদের নিয়ে সম্মিলিত পিঠা-পুলির আয়োজনের উদ্যোগ এখন আমাদের সময়ের দাবী । মেলায় অতিথিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহন এবং উচ্ছাস-উদ্দীপনা ও শৃংখলাবোধের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং প্রত্যাশাও ব্যক্ত করে বলেন অনাগত আগামীর প্রোগ্রামগুলো ছাড়িয়ে যাবে বর্তমানকে । মেলায় আগত মেহমানরা এই আয়োজনকে সাধুবাদ জানান এবং আগামীতেও এই ধরনের অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা প্রত্যাশা করেন ।
অনুষ্ঠানের শেষান্তে সংগঠনের পক্ষ থেকে পিঠা-পুলি নিয়ে আসা ভাবী-বৌদিদের হাতে শুভেচ্ছা পুরস্কার তুলে দেন উপদেষ্টা জনাব নুরুল হক-রহমান । সর্বশেষে সাইতামা বাংলা সোসাইটির সভাপতি এই আয়োজনে অংশগ্রহনকারী সবাইকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান । আগামী মার্চ-এপ্রিলের আয়োজিত ফাল্গুন এবং সাকুরা উৎসবেও সবার সক্রীয় অংশগ্রহনের প্রত্যাশা রেখে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন ।
মোঃ কাউছার হোসেন-আক্কাস
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক,
সাইতামা বাংলা সোসাইটি, ওয়ারাবী, জাপান ।