Breaking News

কেন জাপানিদের লাল ব্যাগ লাগবেই !

বছরের শুরুর সপ্তাহে সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে সকাল থেকে বিভিন্ন দোকানের সামনে লোকজনের লম্বা লাইন দেখা মেলে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোকজনের দাঁড়িয়ে থাকা শুধুমাত্র একটি লাল ব্যাগ পাওয়ার আশায়। বছরের শুরুর দিকে হাজার হাজার মানুষের অপেক্ষা থাকে ওই লাল ব্যাগের জন্য। জাপানি ভাষায় এই ব্যাগকে ফুকুবুকুরো বলা হয়। এটাকে সৌভাগ্যের ব্যাগও বলা হয়। আর বছরের শুরুতে এই ব্যাগ যে পায় সে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করেন। আর সে কারণেই দোকানগুলো থেকে লাল ব্যাগ কিনতে হিড়িক পড়ে যায়। কিন্তু কী থাকে এই লাল ব্যাগে?

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ব্যাগগুলোতে মূলত অনেক জিনিসে ভরপুর থাকে। দোকানভেদে পোশাক থেকে শুরু করে খাবারসহ নিত্য ব্যবহার্য পণ্য থাকে এসব ব্যাগে। বছরের শুরুতে জাপানের দোকানগুলো গত বছরের মালামাল বের করে নতুন করে দোকান সাজাতে চান দোকানিরা। আর সে কারণেই গত বছরের জিনিসগুলো এই লাল ব্যাগে ভরে বিক্রি করে দেন। কিন্তু এখন এই লাল ব্যাগ নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি লেগে যায় দেশটিতে। সময়ের সাথে সাথে লাল ব্যাগের পরিবর্তে বাহারি অন্য ব্যাগও এখন ব্যবহার করা হয়। ক্রেতাদের আকর্ষণ দেখে এখন রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফেগুলোও ফুকুবুকুরো বিক্রি করা শুরু করেছে। জাপানের এই বেচাকেনার পদ্ধতি ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন শহরেও চালু হচ্ছে।

লাল ব্যাগ বা ফুকুবুকুরো বেচাকেনা জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু হয়ে প্রথম এক-দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চলে। অনেক জাপানির মধ্যে এই লাল ব্যাগ পাওয়া একটি উৎসাহের মতো হয়েছে যে লাল ব্যাগ ছাড়া নতুন বছর যেন তারা ভাবতেই পারেন না। কিন্তু কবে থেকে এই ফুকুবুকুরো বেচাকেনা শুরু হয়েছিল সেটা নিদিষ্ট করে জানা যায়নি।

দোকানিরা জানান, নতুন বছরে তারা নতুনভাবে দোকানকে সাঁজাতে চান। এ কারণে আগের বছরের বিভিন্ন পণ্য বিচ্ছিন্নভাবে এই ব্যাগে ভরে তারা। একটি ব্যাগে বিভিন্ন ধরনের পণ্য দিয়ে সাজানো হয়। ফলে ব্যাগে কী কী পণ্য থাকতে পারে সে সর্ম্পকে আগে থেকে ক্রেতাদের কোন ধারণা থাকে। আর এই লাল ব্যাগ বেশ বড় মূল্য ছাড়েই বিক্রি করা হয়। ফলে এটা কিনতে ক্রেতাদের আলাদা আগ্রহ থাকে।

তাহলে কী এই ব্যাগে পুরাতন ফেলনা জিনিসই বিক্রি করা হয়? মোটেই না। এই লাল ব্যাগে একটি দোকানের কম মূল্যের এবং বেশি মূল্যের বিভিন্ন পণ্য এক সাথে মিলে সাজানো হয়। ফলে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় ক্রেতারা যা দাম দিয়ে ব্যাগ কেনেন তার চেয়ে অনেক বেশি দামের পণ্য তারা পেয়ে থাকেন। সে কারণেই প্রিয় পণ্যের দোকানগুলোর সামনে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যান। আর একটি ব্যাগ হাতে পাওয়ার পর খুলে না দেখা পর্যন্ত তাদের আগ্রহের কমতি থাকে না। আবার অনেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাগ না পেয়ে হতাশ হয়ে চলে যান।

 

একটি ফুকুবুকুরা কেনার পর এটাকে জুয়া খেলার সাথে তুলনা করেন ক্লার্ক লটন নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, আমার ফুকুবুকুরা যতক্ষণ পর্যন্ত না খুলে দেখতে পারছি, ততক্ষণ আমার আগ্রহ শেষ হচ্ছে না। আমি মনে করি এর মধ্যে যে জিনিস আছে তা আমার কেনা মূল্যের চেয়ে অনেক গুণ বেশি।

আর বছরের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ব্যাগ কিনতে পেরে ছবি ও বিভিন্ন লেখা পোস্ট দেন ক্রেতারা। অনেকে ব্যাগের মধ্যে কী কী জিনিস পেয়েছে সেটার ছবি দিয়েও নিজেকে সৌভাগ্যবান হিসেবে তুলে ধরেন। এরপর একে একে অন্যরাও তাদের ব্যাগ এবং পাওয়া জিনিসগুলোর ছবি দিয়ে অন্যদের সাথে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। সবাই নিজেদের সৌভাগ্যবান হিসেবে উপস্থাপন করেন। আর যারা তাদের ব্যাগে পছন্দমত জিনিস পান না, তারা আবার এটা অনলাইনে বিক্রি করে দেন অথবা অন্যদের সাথে বিনিময় করে নেন। আর নিতান্তই যদি তার কোনটিই না হয় তাহলে আক্ষেপ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন আগামী বছরের ফুকুবুকুরার জন্য।

বিবিসি অবলম্বনে

 

About admin

Check Also

১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন জাপানি নভোচারী ফুরুকাওয়া

জাপানের নভোচারী ফুরুকাওয়া সাতোশির দ্রুত হলে ১৫ই আগষ্ট আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দ্বিতীয় ভ্রমণ নির্ধারণ করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *