জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় আর্থিক সম্পদ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগী দেশসমূহকে বাংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘ সদরদপ্তরে চলতি ৭৩তম অধিবেশনের দ্বিতীয় কমিটিতে ‘টেকসই উন্নয়ন’ বিষয়ক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জলবায়ু প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সক্ষম টেকসই উন্নয়ন’ দর্শনের কথা তুলে ধরতে গিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এ আহবান জানান। আজ ঢাকায় প্রাপ্ত জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এবিষয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ ৭৩তম সাধারণ পরিষদের হাই-লেভেল সপ্তাহের সময় জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত ‘শীর্ষ নেতাদের জলবায়ু বিষয়ক আলোচনা’ পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত বক্তব্যের অংশ বিশেষ উদ্বৃত করেন। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন,“বাংলাদেশ কখনই উন্নয়নশীল বিশ্বের গড় মাথাপিছু গ্রীণ হাউজ গ্যাসের নি:সরণ অতিক্রম করবে না। নি¤œ কার্বন নি:সরণ ও ‘জলবায়ু প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সক্ষম টেকসই উন্নয়ন’এর প্রতি আমরা দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কার্বন বাজেটিং ও প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সক্ষম শিল্পায়নের দিকে অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। কার্বন-বর্জিত উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলাই আমাদের ইচ্ছা। এগুলোই আমাদের নীতি-আদর্শ যা আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচিসমূহকে পথ দেখায়”।
রাজধানী ঢাকায় গত মে মাসে অনুষ্ঠিত ‘প্রতিবন্ধিত্ব ও দূর্যোগ ঝুকি ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “ঢাকা ঘোষণা ২০১৫+ প্রতিবন্ধীত্ব নিয়ে চলা ব্যক্তিবর্গ এবং এ সংক্রান্ত কার্যকর কৌশল ও নীতিমালা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গৃহীত সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্কের বাস্তবায়নে স্থানীয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক বহু-অংশীজনদের প্লাটফর্ম এবং আন্ত:রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপসমূহকে আরও শক্তিশালী করবে”।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় গৃহীত মেগা প্রকল্প ডেল্টা প্লান-২১০০ সহ জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে জাতীয়ভাবে মূলধারায় সংযোজন করা, জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কৃষিকে জলবায়ু পরিবর্তন ও দূর্যোগের মোকাবিলায় সক্ষম করে গড়ে তোলা এবং অভিযোজন ও প্রশমন খাতে নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করার মতো সরকারের বিভিন্ন টেকসই উন্নয়ন কৌশলের কথা তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ভূমিকা না থাকলেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের স্বীকার বলে রাষ্ট্রদূত মাসুদ উল্লেখ করেন।
এদিকে রাষ্ট্রদূত মাসুদ জাতিসংঘ ৭৩তম সাধারণ পরিষদের প্রথম কমিটির নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি সাইবার সিকিউরিটি নিয়েও আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদ্য সমাপ্ত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের হাই-লেভেল সপ্তাহে একটি সাইডলাইন ইভেন্টে সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান করার কথা বলেছিলেন যা রাষ্ট্রদূত মাসুদ তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
স্থায়ী প্রতিনিধি এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশ উন্মুক্ত, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সাইবার জগৎ গড়ে তোলার জন্য প্রযোজ্য আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগে বিশেষভাবে আগ্রহী। সাইবার জগতে দায়িত্বশীল রাষ্ট্রীয় আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে আন্তরাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান এবং এ বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অর্থবহ অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তার উপর বাংলাদেশ গুরুত্বরোপ করছে। এর যে কোনো প্রক্রিয়ার মধ্যেই উন্নয়নশীল দেশসমূহের বক্তব্য ও উদ্বেগসমূহকে অবশ্যই হিসেবে রাখতে হবে।
সৈজন্যেঃ বাসস