অনলাইন ডেস্ক: জ্বর হয়নি এমন মানুষ বোধ হয় নেই। জ্বরের অভিজ্ঞতা কম-বেশি সবারই রয়েছে। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা (৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) কোনো কারণে যখন বৃদ্ধি পায় তখন তাকে জ্বর হিসেবে চিহ্নিহ্নত করা হয়। জ্বর কোনো রোগ নয়, এটা একটি লক্ষণ। ঋতুর পরিবর্তন, পরিবেশের পরিবর্তন, জীবাণু সংক্রমণ, ইত্যাদি নানা কারণে জ্বরের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এক সময় ম্যালেরিয়া এবং কালা জ্বরের ভয়ে মানুষ আতঙ্কিত থাকত। এখন যেমন ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে সবাই আতঙ্কিত থাকে। ২০০০-২০০১ সালে আমাদের দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। জুন-জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হয়। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। ডেঙ্গুতে প্রথম থেকেই জ্বর খুব বেশি হয় (১০৩-১০৫ ডিগ্রি ফা:) শরীর ব্যথা এবং মাথাব্যথা থাকে। শরীরে বিশেষ ধরনের র্যাশ দেখা দেয়। চোখ, মাঢ়ি ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষরণ হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর দুই ধরনের হতে পারেÑ ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ও ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার। ডেঙ্গু জ্বরে রক্তে অনুচক্রিকা বা প্লাটিলেট কমে যায়। ডেঙ্গু জ্বর হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়া পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘরবাড়িতে যাতে পানি জমা না থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ডেঙ্গু জীবাণু বহনকারী মশার আবাসস্থল হচ্ছে জমাটবদ্ধ পানির আধার।
আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় ভাইরাসজনিত যে জ্বর দেখা দেয় তার নাম ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা। এটি স্বল্পকাল স্থায়ী একটি রোগ। এ রোগে দেহের তাপমাত্রা প্রথম দিনেই উঠতে পারে ১০১-১০২ ডিগ্রি ফা: পর্যন্ত। কখনো কখনো ১০৩ ডিগ্রি ফা: পর্যন্ত উঠতে পারে। কিছু দিনের মধ্যে জ্বর আস্তে আস্তে কমে আসে। সাধারণত জ্বর থাকে তিন দিন থেকে এক সপ্তাহ। জ্বরের সময় শরীরে শীতভাব, মাথা ধরা, পিঠ ও পেশিতে ব্যথা, চোখ ব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া করছে মনে হবে। আলোর দিকে তাকাতে কষ্ট হবে। সাধারণভাবে সব ফ্লু রোগীর নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ থাকা, হাঁচি, কাশি, গলা ব্যথা এবং গলা শুকিয়ে যাওয়ার অনুভূতি থাকতে পারে।
ফ্লু অতীতে অনেক দেশে মহামারী হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাই ফ্লু যাতে মহামারী আকারে দেখা না দেয়, সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু ফ্লু রোগটি শ্বাসনালীর ভাইরাস সংক্রমণ থেকে হয়ে থাকে, তাই এর থেকে নিউমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে। এ জন্য ফ্লুকে অবহেলা করবেন না। যথাসময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিছানায় বিশ্রাম নিন। গলাব্যথার জন্য গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করুন। প্রচুর পানি পান করুন। মাথায় যাতে ঠাণ্ডা না লাগে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। ফ্লু ভাইরাসটি দ্রুত অন্যকে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। হাঁচি, কাশি এমনকি সংক্রমিত ব্যক্তির হাতের সংস্পর্শেও ভাইরাসটি অন্যের দেহে ছড়াতে পারে। তাই সবাইকে হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তিকে বারবার হাত ধুতে উৎসাহিত করতে হবে। নাকে হাত লাগানো থেকে সাবধান থাকতে হবে।
আমাদের দেশে সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা অনেক বেশি। রাইনো ভাইরাস নামক এক শ্রেণীর ভাইরাস এর জন্য দায়ী। প্রায় ৫০ শতাংশ ঠাণ্ডাজনিত জ্বর, সর্দি, কাশির কারণ এ ভাইরাস। এর প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং ভিটামিন সি অধিক পরিমাণে গ্রহণ করা। মনে রাখা দরকার, ঠাণ্ডা লাগাকে কোনোভাবে অবহেলা না করে যথাসময়ে যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ, বারবার ঠাণ্ডা লাগলে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তাই যখনই ঠাণ্ডা লাগবে এবং সাথে জ্বর, হাঁচি-কাশি গলাব্যথা থাকবে, তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ ব্যবহার না করাই ভালো।